ডঃ স ঞ্চা লী মু খা র্জ্জী
ভারত
আরাবল্লি রেঞ্জের পাহাড় ঘেরা উপত্যকার ঠিক মাঝখানে অবস্থিত শেখওয়াত রাজপুতদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঠিকানা খেত্রী। আশ্বিনের মাঝামাঝি এক দিন (4th October) ফাতেহ বিলাসের মূল দরজা খুলে গেল। দুটি ঘোড়ায় চড়ে বেড়িয়ে এলেন দুজন তেজী পুরুষ। গন্তব্য জিন মাতার মন্দির। উপলক্ষ্য দশেরা।সময়টা আশ্বিন মাস, শিউলি সুবাস চারিদিকে । বাংলায় এই সময় মাঠে মাঠে আমন ধানের গন্ধ লেগেছে সবে। সবুজ ধানে জেগেছে সোনালী আভা। দূরে কোথাও মন্দির চত্বরে ঢাকের আওয়াজ ভেসে আসছে। সর্বত্র যেন পুজো পুজো গন্ধ। ঘোড়া থেকে নামলেন দুই রাজাধিরাজ।একজন খেত্রীর রাজা অজিত সিংহ, অপরজন সন্ন্যাসী রাজা স্বামী বিবেকানন্দ। দুজনের মাথায় পাগড়ি। রাজার মাথায় সুসজ্জিত রাজ মুকুট অপরজনের মাথায় সন্ন্যাসী রঙা গেরুয়া পাগড়ি। রাজস্থানের প্রখর রোদের তাপ থেকে বাঁচার জন্য রাজা স্বয়ং স্বামীজিকে এই পাগড়ি উপহার দিয়েছিলেন। খেত্রীর অধিপতি রাজা অজিত সিংহ তাঁর গুরু স্বামী বিবেকানন্দের সঙ্গে দশেরা উপলক্ষে মন্দির দর্শনে বেড়িয়েছেন।
ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণদেব দেহ রাখার পর যে ৮ জন সন্ন্যাস গ্রহণ করলেন তার মধ্যে স্বামীজি ও ছিলেন। এই সময় তপস্যার কারণে তিনি রাজস্থানের আবু পাহাড়ের চম্পা গুহায় আশ্রয় নিলেন। ঘটনাচক্রে ফয়েজ আলী খাঁ তার পরম বন্ধু জগমোহনলাল এর মাধ্যমে রাজা অজিত সিংহের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হলো স্বামীজির। এর কিছুদিন পর রাজার একান্ত অনুরোধে জয়পুর থেকে খৈরথলে হয়ে কেটে ও কেটে থেকে ৭ আগস্ট সকাল সাড়ে সাতটায় স্বামীজীর খেত্রী রাজপ্রাসাদে পদার্পণ।
ইতিমধ্যে মাস খানেক কেটে গেছে।
১২ ই অক্টোবর ১৮৯১ সাল।সকালটা শুরু হয়েছিল শোভাযাত্রার মাধ্যমে। সামনে স্বামীজি স্বয়ং আর তার পাশে তার শিষ্য বন্ধু খেত্রী অধিপতি রাজা অজিত সিংহ। রাজবাড়ীর সামনে সেদিন বিরাট সামিয়ানা। দশেরার দিন। সেই উপলক্ষ্যে বিরাট ভোজসভার আয়োজন করা হয়েছে।
খেত্রীর দশেরা বাংলায় দশমী।এদিন সকাল থেকে পুরোহিত ঠাকুরের চোখে জল, চন্ডীপাঠের গলার স্বর আদ্র। কণকাঞ্জলির মুহূর্ত সমাগত। আবার এসো মা...
মা। স্বামীজির চোখেও ভেসে ওঠে তাঁর নিজের মায়ের মুখ। সমাজ সংস্কার আত্মীয় পরিজনের চক্রান্তে আজ জর্জরিত তাঁর মা। মুহুর্তের জন্য আনমনা হয়ে যান তিনি।দূরে সমবেত সুরে মাতা জাগরণের গান ভেসে আসে।রাজা অজিত সিংহের অপূর্ব বীনার ঝঙ্কারে তাঁর সম্বিত ফেরে।
বাংলার ঘরে ঘরে তখনও ডাক পিয়নের কাজ ফুরোয়নি। ঘরের মেয়েরা নাড়ু,আরশের লোভ দেখিয়ে লোক খোঁজে দু এক কলম লিখিয়ে নেবে বলে।
সেদিন দুপুরবেলা গৌর মোহন মুখার্জি রোডের দত্ত বাড়ির দরজায় ডাক পিয়নের হাঁক। মা ঠাকুরন চিঠি আছে।
চিঠি?
মানি অর্ডার এসেছে।
মানিঅর্ডার?
রাজস্থান থেকে।